অনলাইন ডেস্ক: পারিবারিক নানা বিরোধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন স্ত্রীরা।
বুধবার (২৫ নভেম্বর) সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হয়েছে এমন ৪৭টি মামলার রায়। তবে আপসে নিষ্পতি হওয়ায় এসব মামলার সব আসামিকেই খালাস দিয়েছেন বিচারক মো. জাকির হোসেন।
রায় ঘোষণার পর আদালতের কর্মীরা মামলাগুলোর বাদী-আসামিদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
পরে আদালত থেকে মিলেমিশে ফুল হাতে বাড়ি ফেরেন ৪৬ দম্পতি। এর মধ্যে এক ব্যক্তির দুই স্ত্রী, তারা দুজনই স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।
জানা গেছে, মামলাগুলো আপসে নিষ্পত্তি হওয়ায় স্বামীর ঘরে ফিরেছেন স্ত্রী। সন্তানদের কেউ কেউ ছিল মায়ের সঙ্গে, আবার কেউ বাবার সঙ্গে। এখন তারা মা-বাবা দুজনের সঙ্গে থাকবে। তবে এসব দম্পতিকে মানতে হবে কয়েকটি শর্ত। এ ব্যাপারে আদালতে লিখিত অঙ্গীকার করেছেন তারা।
শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– তারা সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে মিলেমিশে চলবেন, সংসার-ধর্ম পালন করবেন, স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যথাযথ সম্মান দেবেন, শান্তি নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ আর করবেন না, স্ত্রী বা তার পরিবারের কাছে কোনো যৌতুক চাওয়া যাবে না, ছোটখাটো কোনো বিরোধ দেখা দিলে পারিবারিকভাবে বসে শান্তিপূর্ণ উপায়ে তা সমাধান করতে হবে, স্ত্রীকে কখনো নির্যাতন করা যাবে না এবং যদি স্বামী নির্যাতন করেন তবে স্ত্রী আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
রায় ঘোষণার পর বিচারক মো. জাকির হোসেন বলেন, আইন-আদালত সৃষ্টি হয়েছে শুধু মানুষকে শাস্তি দেওয়ার জন্য– মানুষের মধ্যে এমন একটা ভুল ধারণা আছে।
মানুষের এই ধারণাকে পাল্টে দেওয়ার জন্যই আজকের এই রায়। আদালত যে শুধু শাস্তিই দেয় না, মানুষের মধ্যে শািন্তর সুবাতাস বইয়ে দেয়, সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে দিতে পারে, এই রায়ে মানুষ সেটা অনুধাবন করতে পারবে। আজ এতগুলো পরিবার আবার একত্র হলো। স্বামী ফিরে পেলেন স্ত্রীকে, স্ত্রী পেলেন স্বামীকে। একই সঙ্গে সন্তানরা পাবে মা-বাবার আদর-স্নেহ।
পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় সন্তুষ্টি জানিয়ে দম্পতিরা জানান, সংসারের নানা বিষয় নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব, যৌতুক দাবি কিংবা স্ত্রীর প্রতি খারাপ আচরণসহ নানা বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কোর্টে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছিল। স্বামী-স্ত্রীর এসব দ্বন্দ্বের কারণে সবাই ছিলেন আলাদা। এতে পারিবারিক বিরোধ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তাদের সন্তানরা ছিল বাবা-মার আশ্রয়হীন। আদালতের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগে তারা খুশি।
আদালতের ব্যতিক্রমী রায়ের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, আদালতের এরূপ উদ্যোগের ফলে অন্যান্য স্বামী-স্ত্রী যারা পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহি মনোভাব নিয়ে মামলা লড়ে যাচ্ছেন, তারাও এ পথ পরিহার করে শান্তির পথে আসতে উৎসাহী হবেন।
অন্যদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নান্টু রায় গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের ইতিহাসে এতগুলো মামলার রায় একসঙ্গে এটিই প্রথম। রায়ের মাধ্যমে অনেকগুলো সংসার টিকে গেল, আর সন্তানরা পাবে তাদের নিরাপদ পারিবারিক আশ্রয়। এর মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা আরও বাড়বে।