অনলাইন ডেস্ক: কুমারগাঁও বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বিপর্যস্ত সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় ৫৮ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হয়েছে।
গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে আগুন লাগার পর এই কেন্দ্রের আওতাধীন প্রায় ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েন। দীর্ঘ ৩১ ঘণ্টা পর গত বুধবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎবিহীন এলাকাগুলোর একাংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। তবে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন আরও প্রায় ৭৫ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ পেয়েছেন বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায়।
কুমারগাঁও বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে আগুনের পর পুরো সিলেট জেলা ও নগরী এবং সুনামগঞ্জের লাখ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন সিলেট নগরী ও সদর উপজেলার বেশকিছু এলাকার বাসিন্দারা। কারণ গত বুধবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎবিহীন এলাকাগুলোর একাংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলেও এসব এলাকায় তা হয়নি। বিশেষ করে নগরীতে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত প্রায় ৫৮ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎবিহীন থাকা লোকজনের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। তারা পানির জন্য ছোটাছুটি করতে থাকেন। অনেকে বাধ্য হয়ে আত্মীয়স্বজনের বাসাবাড়িতে চলে যান।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন এলাকাগুলোর মধ্যে ছিল নগরের ওসমানী মেডিকেল রোড, বাগবাড়ি, জল্লারপাড়, মির্জাজাঙ্গাল, দাড়িয়াপাড়া, লামাবাজার, রিকাবিবাজার, সুবিদবাজার, মদিনামার্কেট, সাদাটিকর, মিরাবাজার, পাঠানটুলা, দক্ষিণ সুরমা প্রভৃতি। এসব এলাকার লোকজন সীমাহীন দুর্ভোগে আছেন। পাড়া-মহল্লায় পানির জন্য দেখা দেয় হাহাকার।
এসব এলাকার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কিছু পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। দীর্ঘ লাইন ধরে এই পানি সংগ্রহ করেন লোকজন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর গণমাধ্যমকে বলেন, নগরের বেশিরভাগ এলাকায় বুধবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। এরপর সঙ্গে সঙ্গেই সিটি করপোরেশনের গভীর নলকূপ থেকে পানি সরবরাহ চালু করা হয়। রাত ২টা পর্যন্ত পানির পাম্পগুলো চালু রেখে পানি সরবরাহ করা হয়েছে। আর যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল না, সেখানে পাম্প চালানোও সম্ভব হয়নি। তবে জরুরি ভিত্তিতে খাওয়ার জন্য গাড়ি দিয়ে কিছু পানি দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাত সাড়ে ৮টার মধ্যেই সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা সম্ভব হয়েছে। এজন্য আমাদের ঢাকা ও সিলেটের দক্ষ কর্মীরা লাগাতার কাজ করে গেছেন।
বিউবোর এই প্রকৌশলী আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর প্রায় ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। প্রথমে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৮০ ভাগ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপিত হয়। শেষ ধাপে প্রায় ৭৫ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। গ্রাহকদের দ্রুত বিদ্যুৎ দিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছি আমরা। আগুনে দুটি ট্রান্সফরমার ও কন্ট্রোল প্যানেল পুড়ে যাওয়ায় অনেক যন্ত্রাংশ ঢাকা ও গাজীপুর থেকে আনতে হয়েছে। দুর্ঘটনার পর বিদ্যুৎ বিভাগের শতাধিক কর্মী লাগাতার কাজ করেছেন।